শ্রীপুর:(গাজীপুর) প্রতিনিধি:
গাজীপুরের শ্রীপুরে মাওনা চৌরাস্তা এলাকায় এখন এক ভয়ঙ্কর নাম—রিয়াল আহমেদ ওরফে ‘রিয়াল ডন’। এক সময়ের ছিনতাইকারী থেকে শুরু করে এখন সে কোটি টাকার মাদকের সম্রাট। দিনের আলো ফোটার আগেই মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি, জমি দখল, কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণ এবং রাতের আঁধারে চলে ছিনতাই আর অস্ত্রের ঝনঝনানি—রিয়ালের এই অপরাধ সাম্রাজ্য এখন পুরো এলাকায় আতঙ্কের নাম।
শুধু মাদক ব্যবসাই নয়, অনুসন্ধানে জানা গেছে, রিয়ালের বিরুদ্ধে শ্রীপুর থানায় রয়েছে একাধিক হত্যা মামলা, ডাকাতি, ছিনতাইসহ মোট ১০টির বেশি মামলা।
দলের মোড়কে অপরাধের নিরাপদ আশ্রয়
৫ আগস্টের আগে রিয়ালকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিতেন আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের প্রভাবশালী নেতারা। রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় মাথা চাড়া দিয়ে ওঠা এই অপরাধী এখন বিএনপির অঙ্গসংগঠন শ্রমিকদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নতুন করে আবির্ভূত হয়েছে। অনুসন্ধান বলছে, শেল্টারদাতা রাজনৈতিক নেতারাও এখন পাল্টেছে। দল বদলে রিয়াল যেমন নিরাপত্তা পেয়েছে, তেমনি অপরাধের মাত্রাও বেড়েছে কয়েক গুণ।
সূত্র জানায়, মাদক ব্যবসার লভ্যাংশের একটি অংশ এখন পৌঁছে যায় তার নতুন আশ্রয়দাতা নেতাদের হাতে। রাজনীতির নাম ভাঙিয়ে টাকা দিয়ে পদ কেনা, চাঁদাবাজির ভাগ-বাটোয়ারা আর সন্ত্রাসী কার্যক্রমে যারা যুক্ত, তাদের অনেকেই এখন রিয়ালের ছত্রছায়ায়।
ছিন্নমূল থেকে কোটি টাকার মালিক
রিয়ালের উত্থান চুরি আর ছিনতাই দিয়ে হলেও বর্তমানে তার মালিকানায় রয়েছে কোটি কোটি টাকার সম্পদ। ওয়াবদা মোড়ের পাশেই মাদক টাকার জোরে বানিয়েছে ৬তলা বিশিষ্ট এক বিশাল ভবন। আশেপাশে বাড়ি বাড়ি পর্যন্ত মাদক পৌঁছানোর জন্য রয়েছে বিস্তৃত নেটওয়ার্ক ও খুচরা বিক্রেতা। শুধু ইয়াবাই নয়, গাঁজা, ফেনসিডিল, আইসসহ নানা ধরণের মাদকদ্রব্য পাইকারি দামে সরবরাহ করে সে।
সম্প্রতি এক ঝুট ব্যবসায়ীর ট্রাক ছিনতাই করে সে নিজের দাপট দেখাতে চেয়েছিল। পুলিশের সহায়তায় মাল উদ্ধার হলেও এই ঘটনায় শ্রীপুর থানায় একটি মামলা হয়। অথচ আজও রিয়াল আকাশে বাতাসে ঘুরে বেড়াচ্ছে—কোনো দৃশ্যমান আইনি পদক্ষেপ নেই।
চাঁদাবাজি, কিশোর গ্যাং, জমি দখল—সবখানে রিয়ালের হাত
মাওনা চৌরাস্তা থেকে এমসি বাজার পর্যন্ত এলাকাজুড়ে সন্ধ্যার পর যেন হয়ে ওঠে অপরাধের রাজত্ব। সিএনজি স্ট্যান্ডে চাঁদাবাজি, জায়গা দখল, কিশোর গ্যাং পরিচালনা—এসব এখন রিয়ালের নিয়মিত আয়ের উৎস। অভিযোগ রয়েছে, চুরি হওয়া মালামালও সে দেদারসে কিনে নেয়, আবার তা বিক্রিও করে দখলদার চক্রের মাধ্যমে।
প্রশাসনের নিরবতা প্রশ্নবিদ্ধ
অভিযোগ রয়েছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কিছু সদস্যের অসহযোগিতা ও রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে রিয়াল দিনকে দিন হয়ে উঠছে আরও বেপরোয়া। এলাকাবাসীর একাংশ বলছে, রিয়ালের বিরুদ্ধে কথা বললেই হুমকি আসে, আসে সন্ত্রাসী বাহিনীর চাপ।
শুধু মাদক নয়, পুরো একটি প্রজন্ম ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিচ্ছে এমন একজন অপরাধী। রিয়াল আহমেদের মতো অপরাধীদের রাজনৈতিক আশ্রয়-প্রশ্রয়ে বেড়ে ওঠা এবং প্রশাসনের নীরবতা আজ ভয়ঙ্কর পরিণতির দিকে সমাজকে ঠেলে দিচ্ছে।
শ্রীপুর উপজেলা শিল্পাঞ্চল শ্রমিক দলের আহ্বায়ক কাজল ফকির বলেন, রিয়াল অনেক খারাপ,দল থেকে প্রাথমিকভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে, রিয়েলের সাথে শ্রমিক দলের কেউ চলাফেরা করলে তাদেরকে বহিষ্কার করা হবে। শ্রমিক দলে কোনো অপরাধীদের সুযোগ দেওয়া হবে না।
এদিকে গাজীপুর পুলিশ সুপার ডঃ চৌধুরী যাবের সাদেক জানান, অপরাধের বিষয়ে জানতে পেরেছি, পুলিশ তৎপর রয়েছে। শীঘ্রই ওই আসামিকে আইনের আওতায় আনা হবে। অপরাধ দমনে গাজীপুর জেলা পুলিশ কার্যকর ভূমিকা পালন করবে।
সচেতন নাগরিক সমাজ ও স্থানীয়রা রিয়াল আহমেদের অবিলম্বে গ্রেফতার ও তার গডফাদারদের বিচারের আওতায় আনার জোর দাবি জানিয়েছেন।